জাহিদ হোসেনও আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করেন এবং তাঁর এই প্রস্তাব সিন্ধু আইন পরিষদের সদস্ত এবং সিন্ধু আরবী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস-চ্যান্সেলর সৈয়দ আকবর শাহ কর্তৃক সমর্থিত হয়। এই প্রসঙ্গে এক বিবৃতিতে তিনি বলেন যে আরবী ভাষাকেও অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা হইলে ইহা রাজনৈতিক পরাধীনতারই নামান্তর হইবে। ডাঃ জিয়াউদ্দীন আহমদ হিন্দীকে ভারতের রাষ্ট্রভাষা করার দাবীতে কলেজ কমনরুমে একটি সভা আহ্বান করেন। সেখানে প্রাদেশিকতা দূর করার উপায় হিসাবে আরবীকে রাষ্ট্রভাষা করার যে প্রস্তাব উত্থাপিত হয় তার বিরোধিতা করে পাকিস্তান বৌদ্ধ লীগের সেক্রেটারী রবীন্দ্রনাথ বর্মী ১০ই ফেব্রুয়ারি, ১৯৫১, এক বিবৃতি দেন। কিন্তু এক্ষেত্রে আরবীর ক্ষান্ত না হয়ে তিনি উর্দুর সমর্থনে ওকালতিও করেন: ৩০২/৪০৫ পাকিস্তান মোছলেম লীগ কাউন্সিল সম্প্রতি এক প্রস্তাবে মারবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা হইবে। কারণ ইংরেজী ভাষার পর উপ-মহাদেশের অধিকাংশ লোকে উর্দু ভাষা সহজে বুঝিতে পারে। কিন্তু পাকিস্তানের কোথাও আরবী ভাষায় কথাবার্তা বলা হয় না। পাকিস্তানের সংবাদপত্র এবং সামরিক পত্রাদিও উর্দুতে প্রকাশিত হয়। আমাদের মনে হয় আরবীর পরিবর্তে উর্দুই রাষ্ট্রভাষা হওয়া উচিত। সংখ্যালঘু বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধির পক্ষে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার এই সব প্রস্তাব অবশ্য পাকিস্তানের কোনো অংশেই তেমন কোনো সমর্থন লাভ করে নাই। তবে এই দাবী ইসলামী সংস্কৃতির বিকাশের প্রশ্নের সাথে জড়িত থাকায় তা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্রভাষা উর্দু এবং বাংলা ভাষায় আরবী হরফ প্রবর্তনের ঘোর বিরোধিতা সত্ত্বেও ধর্মীয় কারণে আরবীর প্রতি একটা বিশেষ দুর্বলতা এর পূর্বেও ব্যক্ত করেছেন। কয়েক বছর পূর্বে তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন, 'সেদিন পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্যতম রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ না করার পক্ষে কোনো যুক্তি নাই। যদি বাঙলা ভাষার অতিরিক্ত কোনো দ্বিতীয় রাষ্ট্রভাষা গ্রহণ করতে হয়, তবে উর্দু ভাষার দাবী বিবেচনা করা কর্তব্য। এখানে একটি জিনিস বিশেষভাবে লক্ষণীয়। উর্দুর দাবী বিবেচনার ক্ষেত্রে ডক্টর শহীদুল্লাহ ধর্মের প্রসঙ্গ একেবারেই উত্থাপন করেননি। এক শ্রেণীর লোকে উর্দু'র সপক্ষে অভিমত প্রকাশ করিয়াছেন আমি একজন শিক্ষাবিদরূপে উহার তাঁর প্রতিবাদ জানাইতেছি। ইহা কেবলমাত্র বৈজ্ঞানিক শিক্ষা ও নীতি বিরোধীই নয়, প্রাদেশিক স্বায়ত্বশাসন ও আত্মনিয়ন্ত্রণ অধিকারের নীতি বিগহিতও বটে। এই প্রবন্ধটির পর গুরুর শহীদুল্লাহ ১৭ই পৌষ, ১৩৫৪ (২ জানুয়ারী ১৯৪৮) তকবীর পত্রিকায় 'পূর্ব পাকিস্তানের শিক্ষার ভাষা সমতা' নামে আর একটি লেখা প্রকাশ করেন।৬ এই লেখাটিতে তিনি বাংলা, আরবী, উর্দু এবং ইংরেজী ভাষা পরিত্যক্ত হয়, তবে বাংলাকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষারূপে গ্রহণ করা হইলে ইহা রাজনৈতিক পরাধীনতারই নামান্তর হইবে। ডাঃ জিয়াউদ্দীন আহমদ পাকিস্তানের প্রদেশসমূহের বিষালয়ে শিক্ষার বাহনরূপে প্রাদেশিক ভাষার পরিবর্তে উর্দু ভাষার দাবী বিবেচনা করা কর্তব্য। এখানে একটি জিনিস বিশেষভাবে লক্ষণীয়। উর্দুর দাবী বিবেচনার ক্ষেত্রে ডক্টর শহীদুল্লাহ তার প্রবন্ধটির শেষে বলেন: বাংলা দেশের কোর্ট ও বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা ভাষার থেকে ঘনিষ্ঠ। শহীদুল্লাহ সাহেব এ ব্যাপারে কিছু উল্লেখ করার প্রয়োজন বোধ করেননি। তার মতে আরবী ভাষাই বিশ্বের মুসলমানদের জাতীয় ভাষা।ও সেই হিসাবে তিনি মনে করেন যে আরবী ভাষা প্রবর্তন করলে মুসলিম জাহানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে এবং তার ফল স্বরূপ রাজনৈতিক দিক দিচ্ছে এ দেশ লাভবান হবে। এর পর ১৯৫১ সালের ১ই ফেব্রুয়ারি করাচীতে বিশ্ব মুসলিম সম্মেলনের প্রকাশ্য অধিবেশনে ইসমাইলী সম্প্রদায়ের নেতা আগা খান বলেন যে আরবী ভাষা প্রবর্তন করলে মুসলিম জাহানের সাথে পাকিস্তানের সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ হবে এবং তার ফল স্বরূপ রাজনৈতিক দিক দিচ্ছে এ দেশ লাভবান হবে। এর পর ১৮ই জানুয়ারি, ১৯৫০, রাজশাহী কলেজের কিছু সংখ্যক ছাত্র আরবীকে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা রূপে গৃহীত হইবে। পূর্ব পাকিস্তান আরবী সংঘ নামে একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারী সমিতি